বঙ্গভঙ্গ কি? বঙ্গভঙ্গ কাকে বলে ? কত সালে বঙ্গভঙ্গ হয়?

বঙ্গভঙ্গ কি

বঙ্গভঙ্গ

আজকে আমরা আলোচনা করবো বঙ্গভঙ্গ কি অথবা বঙ্গভঙ্গ কি কাকে বলে? কত সালে বঙ্গভঙ্গ হয়? বঙ্গভঙ্গের কারণ? বঙ্গভঙ্গ রদ কি? বঙ্গভঙ্গ রদ কত সালে হয় ইত্যাদি নিয়ে।

বঙ্গভঙ্গ কি?

বঙ্গভঙ্গ শব্দটি ভাঙলে দুটি শব্দ পাওয়ায়। একটি শব্দ বঙ্গ আরেকটি ভঙ্গ। বঙ্গ শব্দের মানে হলো বাংলা আর ভঙ্গ শব্দের মানে হলো ভাগ। তাহলে, বঙ্গভঙ্গ শব্দের অর্থ হলো বাংলা ভাগ।

ভারতবর্ষের বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা নিয়ে গঠিত ছিলো বাংলা প্রদেশ। এই বাংলা প্রদেশের রাজধানী ছিলো কলকাতা। ব্রিটিশ ভারতের এটি ছিল বৃহত্তম প্রদেশ।

শাসনকার্য পরিচালনার সুবিধার্থে ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ব্রিটিশ সরকার বাংলা প্রেসিডেন্সি বিভক্তিকরণের কথা চিন্তা করতে থাকে। এ ক্ষেত্রে বড় ভুমিকা রাখেন স্যার বাম্পফিল্ড ফুলার এবং স্যার এন্ড্রু ফ্রেজার। তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বড়লাট লর্ড কার্জনও বিষয়টি নিয়ে বহুবার আলোচনা করেন। একপর্যায়ে ১৯০৫ সালে ব্রিটিশ সরকার অবিভক্ত বাংলাকে দুই ভাগে ভাগ করেন। যাকে বঙ্গবঙ্গ বলে।

কত সালে বঙ্গভঙ্গ হয়?

লর্ড কার্জনের শাসনামলে বঙ্গভঙ্গ হয়। ১৯০৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গের ঘোষণা  দেন। যা  ১৫ অক্টোবর থেকে এটি কার্যকর হয়। বঙ্গবঙ্গের ফলে দুটি প্রদেশ সৃষ্টি হয়-

  • পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ।
  • পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ।

বঙ্গবঙ্গের ফলে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও আসামকে নিয়ে পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ গঠিত হয়। যার রাজধানী ছিলো ঢাকা।স্যার ব্যামফিল্ড ফুলার এর গভর্নর নিযুক্ত হন। আর পশ্চিম বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা নিয়ে আরেকটি প্রদেশ গঠিত হয় যার নাম দেন পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ। এনড্রু ফ্রেজার এর গভর্নর নিযুক্ত হন ।

আরও পড়ুন-

বঙ্গভঙ্গ রদ কি? বঙ্গভঙ্গ রদ কত সালে হয়? বঙ্গভঙ্গ রদ কে করেন?

লাহোর প্রস্তাব কি? লাহোর প্রস্তাব কে উত্থাপন করেন?

বঙ্গভঙ্গের কারণ?

বঙ্গভঙ্গের অনেকগুলো কারণ ছিলো । তার মধ্যে, ‍উল্লেখ্যযোগ্য কারণগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো-

 শাসনতান্ত্রিক কারণ-

১৮৬১ সালের ইন্ডিয়ান কাউন্সিল এ্যাক্ট অনুযায়ী সৃষ্ট বাংলা প্রদেশের  আয়তন ছিল প্রায় দুই লক্ষ বর্গ মাইল । এ প্রদেশের জনসংখ্যা ছিলো পৌনে আট কোটি। তবে, এই বিশাল প্রদেশের শাসনভার একজন গভর্নরের উপর ন্যস্ত ছিল। যার ফলে এ অঞচলে শাসনতান্ত্রিক শৃঙ্খলায় বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছিলো। তাই ব্রিটিশ সরকার শাসনতান্ত্রিক শৃঙ্খলা সচেষ্ট হয়ে উঠে। অবশেষে বঙ্গ প্রদেশকে লর্ড কার্জন বিভক্ত করে নতুন প্রদেশ সৃষ্টি করেন। লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গ ঘোষণা করেন।

রাজনৈতিক কারণ-

বাংলা প্রদেশকে ভাগ করার পিছনে ব্রিটিশ সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই মুখ্য ছিল। ব্রিটিশ শাসকগণ চাচ্ছিলো বাংলা প্রদেশকে বিভক্ত করতে যাতে বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে।

ভাগ কর শাসন কর নীতি-

বঙ্গভঙ্গ মুসলমানদের আন্দোলন বা দাবির ফসল ছিল না। বঙ্গবঙ্গের প্রস্তাব আসে ব্রিটিশ শাসকদের কাছে থেকে। কার্যত এটি ছিল ব্রিটিশদের ভাগ কর শাসন কর নীতির ফল। ব্রিটিশ শাসকগণ চাচ্ছিলো, এই অঞ্চলকে দুটি ভাগে ভাগ করে শাসন করতে। এ অঞ্চল দুটি ভাগে ভাগ হলে বাঙালি কখনো এক হয়ে ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে পারবেনা। আবার, এ অঞ্চল ভাগ হয়ে গেলে হিন্দু মুসলিমদের মধ্যে এক ধরনের বৈরিতা তৈরি হবে।

সামাজিক কারণ-

ব্রিটিশ শাসনের শুরুর সময় থেকেই মুসলিম সমাজ ধীরে ধীরে সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রাধান্য হারাতে থাকে। ফলে ১৯০৫ সালে পূর্ব বাংলার মুসলিম সমাজ তাদের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারের আশায় বৃটিশ সরকারের বঙ্গভঙ্গ প্রস্তাব জোরালোভাবে সমর্থন করে।

 অর্থনৈতিক কারণ-

কলকাতা প্রদেশের রাজধানী হওয়ায় সকল ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শিল্প কারখানা কলকাতা মুখী হতে থাক। এর ফলে ঢাকা, রাজশাহী অঞ্চলের জনগণ ধীরে ধীরে অর্থনৈতিকভাবে কলকাতার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। তৎকালীন সময়ে কলকাতা হিন্দু সম্প্রদায় নিয়ন্ত্রনে ছিলো। যার কারণে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক বৈষম্য দেখা দেয়। এ পরিস্থিতিতে মুসলমান সম্প্রদায় বঙ্গভঙ্গ সমর্থন করে। ###

 

আরও পড়ুন- বঙ্গভঙ্গ রদ কি? বঙ্গভঙ্গ রদ কত সালে হয়? বঙ্গভঙ্গ রদ কে করেন?

লাহোর প্রস্তাব কি? লাহোর প্রস্তাব কে উত্থাপন করেন?

 

Back to top button